কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ-
কক্সবাজারে ভ্রমণে আসা কিছু সংখ্যক পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ ঘোড়ায় চড়া । পর্যটকরা ঘোড়ার পিঠে চড়ে সমুদ্র সৈকতটি আরো বেশি উপভোগ করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন শোভাযাত্রা, সিনেমার শুটিং, ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা, বিয়েশাদি, খেলাধুলার আয়োজনে ডাক পড়ে ঘোড়া গুলোর।
কিন্তু লকডাউনে খাদ্য সংকটে পড়ে ৬৬টি ঘোড়ার মৃত্যু হয়েছে।
গত বছরের মার্চে লকডাউন শুরু হলে ঘোড়াগুলো নিয়ে বিপাকে পড়েন মালিকেরা। গত ১৭ আগস্ট পর্যন্ত প্রথম দফার লকডাউনে টানা পাঁচ মাসে খাদ্যসংকটে পড়ে তখন ৪৫ টি ঘোড়ার মৃত্যু হয়েছিল।
গত ১ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে আবার লকডাউন। এরপর আবার শুরু হয়েছে খাদ্যসংকট। গেল এক মাসে খাবারের অভাবে ২১টি ঘোড়ার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে কক্সবাজার ঘোড়া মালিক সমিতি।
ঘোড়া মালিক সমিতির সভাপতি আহসান উদ্দিন বলেন, দুই মাস আগেও সমিতির ২১ জনের ঘোড়া ছিল ৯১টি। গত এক মাসে মারা গেছে ২১টি। বর্তমানে শহরে ঘোড়া আছে ৭০টি। অধিকাংশ ঘোড়া ছেড়ে দেওয়া হয়েছে রাস্তায়। সড়কের পাশে, বাঁকখালীর নদীর তীরে যতটুকু ঘাস পায় খাচ্ছে, কিছু ঘোড়া খেয়ে ফেলে প্লাস্টিক বর্জ্য, পলিথিন। অভুক্ত থেকে দুর্বল হয়ে গাড়ির ধাক্কা কিংবা চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যাচ্ছে ঘোড়া। ঘোড়ার খাবার জোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছেন মালিকেরা।
আহসান আরো বলেন , আমার ঘোড়া আছে ১৩টি। এর মধ্যে দুটি ঘোড়া মারা গেছে। একটি ঘোড়ার খাবারের বিপরীতে (তিন বেলা খাবার হিসাবে ছোলা, ভুসি, নিম্নমানের গুড় এবং ঘাস) দৈনিক খরচ হয় ৩৫০ টাকা। লকডাউনে সবার আয় রোজগার বন্ধ। ফলে মালিকপক্ষ অতিরিক্ত টাকা খরচ করে ঘোড়াগুলোকে খাবার জোগাতে পারছেন না। এ কারণে নিজের ১৩টি ঘোড়াগুলোও ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।
শহরের সমিতিপাড়ার বাসিন্দা মো. আলমের ঘোড়া ছিল ১৫টি। গত ১৫ দিনে মারা গেছে চারটি ঘোড়া। আরও তিনটি ঘোড়া অসুস্থ দাবি করে মো. আলম (৪৫) বলেন, ‘লকডাউনে সংসার চালাতে পারছি না, ঘোড়ার খাবার জোগান দেব কিভাবে ? এখন তিনি ঘোড়াগুলো রাস্তায় ছেড়ে দিয়েছেন।
কক্সবাজার সৈকতে ঘোড়া পরিচালনার জন্য একজন করে লোক রাখা হয়। দিনে তারা ২০০-৩০০ টাকা মজুরি পান। ঘোড়ার দৌড়ঝাঁপ বন্ধ থাকায় প্রায় ৭০ জন ঘোড়সোয়ারও বেকার।
সমিতিপাড়ার ফরিদা বেগমের ঘোড়া আছে ১০টি। ইতিমধ্যে মারা গেছে ৮টি ঘোড়া। বাকি দুই ঘোড়ার খাবার সংগ্রহে তাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ঘোড়া মারা যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে ফরিদা বেগম (৩৫) বলেন, ঠিকমতো খাওয়ানো যাচ্ছিল না, তাই ছেড়ে দিয়েছিলেন। রাস্তায় গাড়ির ধাক্কায়, লোকজনের আঘাতে, কেউ শত্রুতাবশত বিষ খাইয়ে, আবার রাস্তাঘাটের প্লাস্টিক বর্জ্য খেয়েও ঘোড়াগুলো মারা গেছে। বেশিরভাগ ঘোড়া মারা গেছে অপুষ্টিতে ভুগে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওয়াহেদুল আলম বলেন, বাণিজ্যিক কাজের জন্য ঘোড়াগুলো আনা হয়েছে। এতদিন ঘোড়ার আয় দিয়ে মালিকপক্ষ সংসার চালিয়েছে। কিন্তু ঘোড়াগুলোকে তারা (মালিক) ঠিকমতো খাবার দেয়নি। এ কারণে অপুষ্টিতে ভুগছে ঘোড়াগুলো। লকডাউনের এই সময়ে বেওয়ারিশ ঘোড়াগুলো শহরের অলিগলি, পথেঘাটে ঘুড়ে বেড়াতে দেখা যায়। দুর্ঘটনায় কিছু ঘোড়া আহতও হচ্ছে। বেশিরভাগ ঘোড়া অপুষ্টিতে নানা রোগে ভুগে মারা যাচ্ছে। মারা যাওয়া ঘোড়া নিয়ে কেউ হাসপাতালে আসছে না, ফলে ঘোড়ার ময়নাতদন্তও হচ্ছে।